পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে মানুষ ; নদীরক্ষা বাঁধের কাজে ধীর গতি।

প্রকাশিতঃ মার্চ ১৫, ২০২৩ | ১০:২৬ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা কলমা, গাঁওদিয়া, বেজগাঁও, লৌহজং-তেউটিয়া, কনকসার এ পাঁচটি ইউনিয়নে হাজারো মানুষের নদী ভাঙন আতঙ্কে কাটছে দিন-রাত। তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, নদীরক্ষা বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু কাজে ধীর গতি দেখে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, বাঁধের কাজের যে ধীর গতি তাতে আসছে বর্ষায় লৌহজং নদীগর্ভে চলে যাবে। আমরা কোথায় যাব? কার কাছে বলবো? ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের নেই গতি।আজ বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা বেজগাঁও বাঘের বাড়ি, মৃধা বাড়ি, গাঁওদিয়া শামুরবাড়ি লৌহজং- তেউটিয়া নওপাড়া, কনকসার নদীর পাড়ের অংশ কলমা নদীর পাড় এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন জিও ব্যাগ নদীর পাড়ে দৃশ্যমান। তবে নদীরক্ষা বাঁধের কাজের পাথর তৈরি হচ্ছে এবং কিছু পাথর এলোমেলো রাখা আছে। প্রকৃতভাবে ভাঙন রক্ষা কোন বাঁধ এখনো দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আসছে বর্ষায় লৌহজংয়ের মানচিত্র নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। সরকারের বরাদ্দ কোন কাজে নাও আসতে পারে।নওপাড়ার স্থানীয় হোসেন মোল্লা ও মিঠু মোল্লা জানান, তাদের কয়েক’শ বছরের ভিটেমাটি ভেঙে যাওয়ায় বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে নদীর পাড়ে এসে বসে থাকেন। আর নিজের হারিয়ে যাওয়া ভিটেমাটির কথা ভাবেন।স্থানীয় ফরিদ মাঝি বলেন, তিন দশক ধরে দেখছি, প্রতিবছর গ্রামের পর গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে।গৃহবধূ ফাতেমা বেগম জানান, ১৭ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। তখন আশপাশে নদী দেখিনি। এখন নদীর প্রতিটি ঢেউ কানে বাজে। ঘরবাড়ি ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। মনে হয়, এই বুঝি পদ্মায় গিলে খাবে ঘরবাড়ি। আমরা দ্রুত এ ভাঙনের স্থায়ী সমাধান চাই।গাঁওদিয়ার মো. মোহন মৃধা ও বিল্লাল হোসেন বলেন, নদীতে এখন পানি নাই। তবে আমাদের মনে আতঙ্ক, যদি নদী ভাঙন শুরু হয় শেষ সম্বলটুকু হারাবো। বেজগাঁও ভাঙন মুখে থাকা কামাল বলেন, একসময় নদী আমাদের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ছিল। পদ্মার ক্রমাগত ভাঙনে একেবারে ঘরের সামনে এসে নদী ঠেকেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আশায় ছিলাম আমাদের এখানে স্থায়ী বাঁধ হলে ভাঙন বন্ধ হবে।এ বিষয়ে গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম, বেজগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক ইকবাল মৃধা, লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম মোল্লা, কনকসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিদ্যুৎ আলম মোড়ল বলেন, নদীরক্ষা বাঁধ হয়ে গেলে এ এলাকার মানুষের সকল আতঙ্ক কেটে যাবে। তবে বর্তমান কাজের যে গতি বর্ষা আসলে মনে হয় অনেকের ভিটেমাটি হারাবে। কাজের গতি দেখে মনে হয় সরকারের বরাদ্দ মানুষের উপকারে আসবে না। যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি নিয়েছে তাদের অবহেলায় এলাকার মানুষ এখন আতঙ্ক প্রকাশ করছে। এছাড়া যেসকল নদী ভাঙন এলাকায় বর্ষার মৌসুমে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এমপি তা জাতীয় সংসদে তুলে ধরেছেন এবং সাথে সাথে মন্ত্রী মূল কাজের আওতায় আনার জন্য প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন।লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, এখন পানি শুকিয়ে গেছে। আতঙ্কের কোন কারণ নেই। এছাড়া লৌহজং-টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় ৪৪৬ কোটি টাকার স্থানীয় বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। এ প্রকল্পে লৌহজং উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের ৯ হাজার ১০০ মিটার নদী তীরবর্তী এলাকায় বাঁধের কাজ হবে। সেখানে প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে ফাউন্ডেশন করা হচ্ছে। তারপর পাথর (ব্লক) ফেলে বাঁধ দেওয়া হবে। কাজের ধীর গতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাপ প্রয়োগ করবে। আমরা তাদের জানিয়েছি।লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল রশিদ শিকদার বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের এলাকার নদী ভাঙন এলাকার কাজের গতি ধীরে হওয়ায় এলাকার লোকজনের অনেক অভিযোগ। সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। তবে ঠিকাদারি কাজের গতি নেই। লৌহজংয়ের মানচিত্র রক্ষায় কাজের গতি দরকার।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী দৈনিক ডেনেট বাংলাদেশকে জানান, লৌহজং উপজেলা ভাঙন প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এলাকায় প্রথম বাঁধ নির্মাণের আওতায় আনা হয়েছে। ভাঙন এলাকায় অস্থায়ী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পাথর (ব্লক) তৈরি করা হচ্ছে। আশা করি, বর্ষার পানির আগে আমরা বাঁধ কাজ অনেকটা সম্পন্ন করতে পারবো। কাজের ধীর গতি সম্পর্কে তিনি জানান, আমরা ঠিকাদারি কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি। আমি দুই-একদিনের মধ্যে কাজের গতি দেখতে এলাকায় যাবো। জমি ব্যবহার করতে সহযোগিতা চাই। আপনারা এলাকার লোকজন সহযোগিতা করুন। দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করা হবে।মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, নদীরক্ষা বাঁধের কাজের বরাদ্দের জন্য দিনরাত অনেক কাজ করে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ এনেছি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা এবং কাজের ধীর গতি সম্পর্কে এলাকার মানুষের অভিযোগ আছে। আমি বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নিতে বলবো।উল্লেখ্য, গত ১৮ মে লৌহজং উপজেলার হাড়িদিয়ায় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।